পাখির কলকাকলিতে মুখর দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের মারগাঁও গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ি। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে স্থানীয়দের।

মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পাখি প্রেমীরাও। এ চেয়ারম্যান বাড়ি যেন পাখির অঘোষিত অভয়ারণ্য।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই গ্রামটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে বলে জানান চেয়ারম্যান বাড়ির লোকজন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ৫৫ বিঘা জমির উপর সবুজ ছায়া ঘেরা হাজারো গাছ ও বাঁশঝারে বিভিন্ন পাখিদের অভয়ারণ্য। সারাবছরই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় কালো পানকৌড়ি, সাদা-বক, জ্যাঠা-বক, আম-বক, কানি-বক, পানকৌড়ি ও রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উপস্থিতিতে এখন অপরূপ সুন্দর পাখিদের জন্য একটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

সারাদিনই সেখানকার গাছে গাছে পাখিদের কিচির-মিচির শোনা যায়। উপযুক্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে সেখানে এমন পাখিদের সমারোহ। চেয়ারম্যান বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী পাখিদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল।

সকালে পাখিগুলো আহারের জন্য আশপাশে খোলা মাঠে চলে যায়। আর সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসে নিজ কুটিরে। প্রায় শতাধিক বছর ধরে পাখিরা এখানে বসবাস শুরু করেছে। বছর বছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহলে মুগ্ধতা ছড়ায় মানুষের মনে। ওই গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ির বিভিন্ন বাঁশঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের এক একটি স্বর্গরাজ্য ও অভয়ারণ্য।

পান কৌরি, সাদা-বক, রাতচোর পাখিরা বাঁশের বা বিভিন্ন গাছের চূড়ায় বসে ডানা ঝাপটায়। আবার গাছের মাথার উপর দিয়ে দুই-এক চক্কর দিয়ে এসে গাছের চূড়ায় বসে।

কোনটা গাছের এক ডাল থেকে অন্য ডালে, আবার কোনটা বাঁশের এক কঞ্চি থেকে অন্য কঞ্চিতে, এক গাছ থেকে অন্য গাছে নির্বিঘ্নে উড়ে যেতে থাকে। পাখিদের বাসার ভেতর থেকে ছানাগুলো টেক টেক শব্দ করে ডাকছে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখিরা। কোনোটি বাসা বাঁধছে আপন মনে, আবার কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে। নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না পাখির সঙ্গে মানুষের কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেছে।

পাখিদের এই অভয়ারণ্য কত দিন ধরে আছে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বাড়ির পাখিপ্রেমী জিকরুল হক শাহ্ জানান,আমার বাপ-দাদার আমল থেকে দীর্ঘ যুগ ধরে আমাদের এ বাড়িটি চারপাশ ঘিরে পাথিদের অভয়ারণ্য। প্রতি বছরই অতিথি পাখিমুখরিত থাকে বাড়ীর চারপাশ।

এখানে দিনে রাতে সব সময়ই পাখিরা অবস্থান করে। প্রতি বছরে শীতকালে পাখিদের বিচরণ দেখা গেলেও এবার বসন্তের শুরুতে পাখিদের বিচরণ অনেক বেশি ছিলো এবং এখন পযন্ত অসংখ্য পাখি আছে।পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে তাদের। এরা দিন-রাত প্রায় সব সময় কিচিরমিচির করলেও তাদের কোনো সমস্যা হয় না। পাখির এই অভায়ারণ্য দেখতে ছুটে আসে পাখিপ্রেমীরা।

খানসামা উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান
জনবন্ধু এটিএম সুজাউদ্দিন শাহ্ লুহিন বলেন, প্রতি বছর জানুয়ারী শেষে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমণ ঘটে এবং জুলাই এর শেষের দিকে চলে যায়। তবে এবার এখন পযন্ত অসংখ্য পাখি আছে।

তিনি আরো বলেন, বাপ- দাদার আমল থেকে দেখে আসছি আমাদের বাড়ির চারপাশে আমাদের নিজস্ব গাছ ও বাঁশঝারে অতিথি ও দেশী পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ওই পাখিরা নিরাপদ আশ্রয় থাকে আর এই এলাকায় ভুলেও কেউ পাখি শিকারের কথা চিন্তা করে না। কিন্তু বিল বা জমিতে যখন পাখিরা খাবার আহরণে যায়, তখন দুষ্ট প্রকৃতির কিছু মানুষ পাখি শিকার করে। যদি এটা বন্ধ করা যায় তাহলে এখানে পাখিদের আগমণ আরো বাড়বে। তিনি আরো বলেন, পাখিগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হলে খানসামা উপজেলায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য গ্রাম হিসেবে গড়ে উঠবে।

ভাবকি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়িকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।

এতে করে পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এলাকার মানুষজন বিভিন্ন প্রজাতির পাখিকে দেখে আনন্দিত হবে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন প্রধান বশির উল আলম মুঠোফোনে এই প্রতিনিধিকে জানান, আসলে এটাতো মেসেজ দেওয়ার বিষয়।

অনেক সময় আমাদের কেউ জানায়নি যার কারণে সারা বাংলাদেশে আমাদের সংকট আছে। ঠিক আছে, আপনি অনেক ভালো একটা ইনফরমেশন দিয়েছেন আমি বিষয়টা নিজে তদারকি করে দেখবো।